
দিগন্ত জুড়ে মাঠ হলুদ ফুলে ছেয়ে গেছে। ফুলের মৌ মৌ করা গন্ধ, মৌ-মাছির গুঞ্জন ও পাখির কিঁচিরমিঁচির ডাকে কী অপরূপ সরিষার খেত। যতদূর চোখ যায় হলুদ আর হলুদের সমারোহে প্রতিটি ফুলে দুলছে সষিসা চাষিদের রঙ্গিন স্বপ্ন। এ বছর কোন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে সিরাজগঞ্জে সরিষার বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষি ও কৃষি বিভাগ। সরিষা ক্ষেতের পাশে বসানো হয়েছে সারি সারি মৌ-বক্স। এই বক্সে থাকা মৌ-মাছির গুণগুন শব্দে মুখরিত চারদিক। মৌ-চাষিরা এখন ব্যস্ত সময় পার করছে মধু সংগ্রহে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর জেলায় সরিষা আবাদের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৫২৬৮০ হেক্টর। আবাদ হয়েছে ৪৯৫৫০ হেক্টর জমিতে । আর এ থেকে উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৭১১১৮ মেট্রি টন। সরিষার জমিতে গেলে ফুলের মৌ মৌ গন্ধে বুক ভরে যায়। সরিষা ক্ষেতগুলিতে এখন সৌখিন প্রকৃতি প্রেমিরা বেড়াতে আসছে প্রতিদিন। তারা প্রতিদিনই এই অপরুপ সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য ক্যামেরা বন্দি করে রাখছেন।
উল্লাপাড়া উপজেলার বড়হর গ্রামের কৃষক আব্দুর রহমান জানান, সরিষার ভালো ফলন হবে এমনটাই আশা করছি। তবে কৃষকদের সরিষা চাষে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বক্ষণিক আমাদের পরামর্শ দিচ্ছেন বলে জানান কৃষকরা। তাদের মতে, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যদি কৃষকদের ঠিক মতো দেখাশোনা করে তাহলে আরও বেশি সরিষা চাষ করা সম্ভব।
কাজিপুর উপজেলার রতনকান্দি গ্রামের কৃষক আফজাল হোসেন বলেন, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতায় কৃষকরা ধান চাষের পাশাপাশি সরিষা চাষেও আগ্রহী হয়ে উঠেছে।
সদর উজেলার সয়দাবাদ গ্রামের কৃষক শাহ-জাহান আলী বলেন, এবার বন্যার কারণে তাদের এলাকায় সরিষার চাষ কিছুটা দেরী হলেও আবহাওয়া ভাল থাকায় সরিষার ফলন ভালো হওয়ার আশাবাদ ব্যাক্ত করেন। বাজারে সরিষার দাম ভালো থাকায় কৃষকের লাভের অঙ্কটা একটু বেশি হবে বলে তিনি জানান।
তিনি আরও বলেন, জমিতে বিঘায় সাড়ে ৩ মন কোনো কোনো জমিতে ৪ মন সরিষা পাওয়া যাবে। এবার দাম ভালো পেলে আগামীতেও কৃষকেরা সরিষা চাষে আরো আগ্রহী হবেন।
এদিকে, মৌ চাষিরা জানান, জেলায় এ বছর প্রায় ২০ হাজার মৌ বক্স স্থাপন করা হয়েছে। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে এবার মধু সংগ্রহ বেশি হবে। এই মধু শিল্পের উন্নয়নের জন্য আর্থিক ঋণ ও সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার দাবি জানিয়েছেন মৌ চাষিরা। জেলার সরিষা ক্ষেত্র থেকে সংগ্রহ করা উন্নতমানের মধু পাইকারী ২৫০-৩০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে বলে জানিয়েছেন মৌ চাষিরা।
আদর্শ মৌ খামারের মালিক শহিদুল ইসলাম জানান, ৩০০ টি মৌ-বক্স থেকে প্রতি সপ্তাহে ৮ থেকে ১০ মন মধু সংগ্রহ করা যায়। সরিষার ক্ষেত্রে মৌ-বক্স স্থাপনের কারনে সরিষার ফলনও বৃদ্ধি পায়। খাঁটি মধু ক্রয় করতে অনেকেই চলে আসেন মাঠে।
পাবনা থেকে আসা মৌ চাষী আশরাফুল ইসলাম জানান, দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে মধু সংগ্রহ করতে আসেন পাইকার ব্যাবসায়ীরা। তবে মধু সংরক্ষণ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণের সঠিক ব্যবস্থা না থাকায় কাঙ্খিত দাম না পাওয়ার অভিযোগ মৌ চাষিদের।
মাঠে মধু ক্রয় করতে আসা শহিদুল ইসলাম বলেন, প্রতি বছরই আমি মাঠে থেকে ভাল মধু সংগ্রহ করি। এ বছর প্রায় ১০ কেজি মধু সংগ্রহ করব। এই মধু সারা বছর পরিবার নিয়ে ব্যবহার করি। মাঠ থেকে মধু ক্রয় করলে ভেজাল মুক্ত মধু পাওয়া যায়।
জেলা কৃষি সম্প্রসাণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মু. আবু হানিফ জানান, সরিষা বীজ ও সার সরকারের প্রনোদনা থাকায় কৃষকরা আগ্রহী হয়েছে সরিষা চাষে। কিন্তু তাড়াশ ও উল্লাপাড়া উপজেলায় বন্যার পানি দেরীতে নামায় ও বৃষ্টির কারণে সরিষা আবাদেও লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হয়নি। আবহাওয়া অনুকুলে থাকলে জেলায় সরিষার বাম্পার ফলন হবে। এই মৌ বাক্সের মধু থেকে কৃষকরা বাড়তি আয় করেন। খেতে মৌ বাক্স স্থাপনে মৌ-মাছির পরাগায়নের মাধ্যমে ১০ শতাংশ ফসলের ফলন বেশি হয় বলে তিনি জানান।