
আমরা যখন এই সিদ্ধন্তে পৌঁছলাম যে, মুসলমানরা আমাদের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে, তখন আমরা ইসলামের নবীর আর্দশ সর্ম্পকে জানতে শুরু করি। আমরা জানি যে, ইসলামের নবী বলেছিলেন, যার আস্থা রাখার গুণ নেয়, তার বিশ্বাস নেয়, যে চুক্তি পালন করে না, তার র্ধম নয়। তার এই আদর্শগুলো আমরা পালন করি।
আমরা প্রতিশ্রুতি পূরণ করি। আস্থা রক্ষা করি। আমাদের শাসকদের প্রতি জনসাধারণের আস্থা রয়েছে। আমরা তাদের থেকে পাই পাই করে হিসেব নেয়। তাদের উপর আমাদের আস্থা আছে। রাসূল (সা.) বলেছিলেন, আমানত রক্ষা কর। রাসূলকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল, একজন মুসলমি কি মিথ্যাবাদী হতে পারে?
তিনি বলেছিলেন, মিথ্যা বলার অভ্যাসকে ঈমানের সঙ্গে সংযুক্ত করা যায় না। তাই আমরা কখনো মিথ্যা বলি না, আমাদের সন্তানদের মিথ্যা বলার বিষয়ে কোনো ধারণাই নেয়। ইসলামের নবী দরিদ্র, মিসকিন, গরীবদের খোঁজ-খবর নেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। তাই আমাদের দেশ, আমাদের সরকার প্রতিটি বেকার, অসহায়, গরীবকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করে।
তাদের সহায়তা জনগণের কর থেকেই প্রদান করা হয়। এমনকি যাদের ঘর-বাড়ি নেয়, সরকার তাদের ঘর-বাড়ি করে দিচ্ছে। আজ ব্রিটেন, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় মুসলমানসহ অনেক মানুষ সরকারি নির্মিত ঘরে জীবন যাপন করছে। রাসূল (সা.) বলেছেন, যে পৃথিবীতে যশ-খ্যাতির জন্য লালায়িত হবে, কেয়ামতের দিন তাকে লাঞ্জিত ও অপমানিত করা হবে।
আমাদের দেশগুলোতে আমাদের মন্ত্রী, সরকারী কর্মকর্তা, বড় বড় ধনীরা সাধারণ মানুষের মতোই জীবন যাপন করেন। বিশেষ অনুষ্ঠান ছাড়া ব্যতক্রিম পোশাক পরিধান করে না। গরম কালে সাধারণ সুতি কাপড় আর শীতের মৌসুমে মোটা কাপড় পরে বাইরে যায়। তবে এর বিপরীতে আপনাদের দেশের একজন ধনীকে দেখুন।
একব্যক্তির কমপক্ষে এক ডজন পোশাক রয়েছে। আমাদের দেশের ধনী ব্যক্তিরাও তাদের ব্যয়বহুল গাড়িগুলোর সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে পারবে না, আপনাদের দেশের শাসকদের প্রাসাদের নানান জিনিস সোনার তৈরি থাকে। তালাও র্স্বণের হয়। অথচ আপনাদের রাসূল (সা.) বলেছেন, হজরত দাউদ (আ.) হাত দিয়ে কাজ করতেন। খেটে খাওয়াদের মতোই খেটে খাবার জোটাতেন।
প্রতিটি মুসলমান জানে, যে উপার্জন করে খায় সে আল্লাহর বন্ধু। অথচ যারা তাদরে হাত দিয়ে কাজ করেন, তাদেরকে নিকৃষ্ট নিচু বলে বিবেচনা করা হয়। আমাদের দেশে একজন কর্মকার ও একজন সংসদ সদস্য অথবা মন্ত্রীকে ভিন্ন চোখে দেখা হয় না। তারা প্রতিবেশী হয়। একই রেস্তোরাঁয় খাবার খায়। একই টেবিলে বসে একই কাতারে দাঁড়িয়ে খাবার ক্রয় করে।
তিনি আরো বললেন, আপনাদের রাসূল (সা.) নিজের কাপড় নিজে ধুয়ে ফেলতেন। নিজের জুতো নিজেই মেরামত করতেন, আমরাও তাই করি। আমরা সব কাজ নিজেরাই করি, আমাদের কর্মচারী নেই, ধনী লোক নিজের জুতা নিজেই বহন করে,নিজের গাড়ি নিজেই ড্রাইভ করে। নিজের কাপড় নিজেই ধুয়। নিজের ঘর ও নিজের টয়লেট নিজেরাই পরিষ্কার করে।
আপনাদের রাসূল (সা.) বলেছেন, যে ভেজাল মিশ্রিত করে সে আমাদের দলভূক্ত নয়। নিউজিল্যান্ড থেকে প্রশান্ত মহাসাগরের পশ্চিম উপকূলে যেকোনো দেশে ভেজাল খাবার বিক্রি হয়? না! তারা ভেজাল খাবার বিক্রি করে না।রাসূল (সা.) আরো বলেছেন, যে ব্যক্তি কারো কাছে ত্রুটিযুক্ত জিনিস বিক্রি করে আর ক্রেতাকে সেই ত্রুটি সম্পর্কে অবহিত না করে, তখন আল্লাহর ফেরেশতাগণ সর্বদা তাকে অভিশাপ দিতে থাকবেন। হ্যাঁ, এটি আমাদের কাছে খুব বাজে কাজ। আমরা কখোনো কাউকে ধোকা দেই না।
আমরা ত্রুটিযুক্ত জিনিস ফেরত নেয়। আপনাদের নবী (সা.) বলছেনে, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা ঈমানের অঙ্গ। আপনি দেখুন, মুসলিম দেশগুলো থেকে অমুসলিম দেশগুলোই বেশি পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। আপনার রাসূল (সা.) বলেছেন, তোমরা বৃদ্ধ ও দুর্বলদের প্রতি যত্নশীল হও।
আমাদের দেশে বৃদ্ধ ও দুর্বলদের জন্য বিনামূল্যে চিকিৎসা, বাস এবং ট্রেনে বিনামূল্যে ভ্রমণ, অত্যন্ত স্বল্পমূল্যের আবাসন সরবরাহ করা হয়। আমাদের পুরানো বাড়িগুলো পাঁচতারা হোটেলগুলোর মানের। অগণিত স্বেচ্ছাসেবীরা একা থাকা প্রবীণদের সেবা যত্ন প্রদান করে যাচ্ছেন। স্বেচ্ছাসেবীরা তাদের বাড়িতে গিয়ে তাদের কাজ করে দিচ্ছেন।
আপনাদের দোকান, কারখানা বাসা বাড়িতে কালিমা ও দুরূদ লেখা থাকে, অথচ ভেতরে মিথ্যা কথা বলা হয়, প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘন, ভেজাল ও চুরির ব্যবসা করা হয়। আপনাদের বাড়িতে লেখা থাকে ‘হাজা মনি ফজলে রাব্বি’। আর বাড়ির ভেতরে চাকরদের উপর নির্যাতন নিপীড়ন করা হয়।
আপনাদের গাড়িগুলোতে ‘ইয়াসিন’ টানানো থাকে, আর আপনারাই প্রতিটি ট্রাফিক আইন লঙ্ঘন করে আসছেন। আপনারা রবিউল আউয়াল এর ১২ তারিখ উদযাপনের জন্য কোটি কোটি টাকা ব্যয় করেন। অথচ সারা বছর চলে যায় আপনার নবী (সা.) এর উপদেশ অনুসরণ করেন না। তার আদর্শ অনুযায়ী চলেন না।
আমাদের কাছে প্রতিদিনই ১২ রবিউল আউয়াল। আমরা আপনাদের রাসূলের প্রতিটি কথা প্রতিদিন প্রতিক্ষণ মানার চেষ্টা করছি। আর দিন দিন উন্নতির শিখরে আরোহণ করছি। আমরা এখন পৃথিবীর আইডল হয়েছি এটা শুধু মুহাম্মদ রাসূল (সা.) এর কারণেই। কারণ তিনি বিশ্ববাসীর জন্য রহমত হিসেবে প্রেরিত হয়েছেন। যে বিশ্বের মধ্যে আমারাও আছি।
আমার বিশ্বাস, মুহাম্মদের রব আমাদেরও ঈমান দিয়ে সৌভাগ্যবান করবেন। আপনি দেখুন, আমাদের মধ্যে যারা মুসলিম হয়, তাদের মধ্যে কোনো গর্ব নেই, যেমন গর্ব দেখা যায় খান্দানি মুসলিমদের মাঝে। আমার সঙ্গে কথা বলে সে নারী বাসে চড়ে কর্ডোবা চলে গেলেন। আমি জানি না সে মুসলিম ছিল, নাকি অমুসলিম। তবে আমার মন বলছে সে মুসলিম না হলেও একদিন না একদিন ইসলাম গ্রহণ করবেন।
তবে প্রত্যেক রবিউল আউয়াল মাসে আমার মনে হয়, নিজেকে আমি কীভাবে মুসলিম বলে পরিচয় দিব? প্রবীণ লেখক কলামিস্ট ইজহারুল হক পশ্চিমা এ নারীর থেকে ইসলাম সম্পর্কে এমন জ্ঞানগর্ভ আলোচনা, বাস্তবতার কথা শুনেছেন, এটাই কী আমাদের মুসলিম সমাজের অবস্থা নয়? সিরাতে রাসূলের প্রতি মুসলমানদের দৃষ্টিভঙ্গি কী আর পশ্চিমাদের দৃষ্টিভঙ্গিই না কী!
আমরা আমাদের নবীকে অনুসরণের কথা শুধু মুখেই বলি, আর তারা তাদের জীবনে ফিট করে বিশ্বের মাঝে মাথা উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা তাঁকে প্রেমের নবী, দয়ার নবী বলি। তবে আমাদের মাঝে তাঁর জন্য প্রকৃত ভালোবাসা মুহাব্বত আর প্রেম নেয়।
মাওলানা আবদুল মাজেদ দরিয়াবাদীর বলেন, আমরা যদি আজ এই মহান ব্যক্তিত্বের আদর্শ অনুসরণ করতাম, তবে আমরা বিশ্বাসঘাতকতা ও বেঈমানীর মতো নিকৃষ্ট কাজে জড়াতাম না। যদি আমরা আল্লাহর প্রেরিত এ রহমতের অনুসরণ করতাম, আমাদের মনে অন্যের প্রতি অবিশ্বাস, সন্দেহ, কু-ধারণা থাকতো না, আমাদের জীবনে বিচ্ছিন্নতা ও বৈরিতা, ঝগড়া-বিবাদ কলহ থাকতো না।
আমাদের মাঝে যদি নবীর আদর্শ থাকতো, মুখ থেকে মিথ্যা বের হতো না। যদি আমাদের হৃদয়ে মুহাম্মদ আহমদ নামের সম্মান থাকতো, তাহলে আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে আল্লাহ তায়ালার হামদ সানা থেকে নিজেদের বিরত রাখতে পারতাম না। আর আমাদের জীবনের সঙ্গে যদি মুহাম্মদ নামের অস্তিত্ব বিদ্যমান থাকতো, তাহলে সব ধরণের দুর্নাম থেকে আমরা বিরত থাকতে পারতাম।
ব্রিটিশ সেই সাদা নারী মুসলমানদের সিরাতের আয়না দেখিয়ে দিয়েছেন। এ আয়নায় এখন আমাদের দাগ আর ত্রুটিগুলো দেখে দেখে দূর করার চেষ্টা করতে হবে। আর এটাই আমাদের ঈমানী দায়িত্ব।